চলনবিল অধ্যূষিত ঐতিহাসিক জনপদ চাটমোহর উপজেলার ‘ছাইকোলা ইউনিয়ন’। ১৯৩৯ সালে এই ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। পূর্ব যুগে ছাইকোলা ইউনিয়নের সমগ্র এলাকা চলনবিলের অংশ ছিল। কালের আবর্তে চলনবিলের এ অংশ জেগে উঠলে এখানে জনবসতি গড়ে উঠে একটি জনপদের সৃষ্টি হয়। এখানকার একটা বড় অংশ বনাঞ্চলেও পরিণত হয়। জনশ্রুতি রয়েছে যে, কোন এক সময় কোন এক জমিদার এখানে শিকারে আসেন। শিকারে এসে এখানে অবস্থান করতে থাকাবস্থায় তিনি মাটির নিচে ৭টি কোলা (মাটির পাত্র) আবিস্কার করেন। মাটির নীচে প্রোথিত কোলায় গুপ্তধন আছে ভেবে তিনি লোকজন লাগিয়ে সেগুলো উঠিয়ে আনেন। অতঃপর সেগুলো খুলে দেখেন যে, প্রতিটি কোলার মধ্যে শুধু ছাই আর ছাই। এই ঘটনার সুত্রপাত থেকে এখানকার নামকরণ হয় ‘ছাইকোলা’। ‘ছাইকোলা ইউনিয়ন’ চলনবিলেরই একটি অংশ। এখানকার জনসাধারণের জীবন ও জীবিকা চলনবিল নির্ভর। এই ইউনিয়নের প্রধান ফসল ধান ও রসুন। ইউনিয়নের ৮৫% মানুষ কৃষিজীবি। এখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক হিন্দু পরিবারের বসবাস আছে। এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চমৎকার সহাবস্থান বিদ্যমান। ছাইকোলা ইউনিয়নে সকল রাজনৈতিক দলের সক্রিয় কার্যক্রম রয়েছে। তবে এই ইউনিয়নবাসী পরমতসহিষ্ণু মনোভাব সম্পন্ন হওয়ায় কোন প্রকার রাজনৈতিক সহিংসতা নেই। সকল দলের নেতা-কর্মীরা একই মঞ্চে সমবেত হতে কখনো কার্পন্য করেন না। এলাকার উন্নয়নে এবং জাতীয় প্রয়োজনে নেতা-কর্মীরা সকলে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করেন।
ছাইকোলা ইউনিয়নে ছাইকোলা ওয়ারেছীয়া আস্তানা শরীফ নামে একটি স্থাপনা রয়েছে। জানা যায় যে, আহ্ছান আলী আহাম্মদ শাহ্ ওয়ারেছী নামের এক বুযুর্গের আস্তানা এখানে ছিল। তিনি এখান থেকে মানুষকে ধর্মীয় শিক্ষায় দিক্ষীত করতেন। ১৯৬৬ ইং সালের বাংলা ১৬ই পৌষ তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর ওফাত দিবসের স্মরণে প্রতি বছর পৌষ মাসের ১৬ তারিখে এখানে ওরছ অনুষ্ঠিত হয়। সে ওরছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু সংখ্যক লোক অংশগ্রহণ করে থাকে।
ছাইকোলা ইউনিয়নের সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে ‘ছাইকোলা হাট’। স্থানীয় জনসাধারণ তাদের উৎপাদিত ফসল এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি এই হাটেই ক্রয়-বিক্রয় করেন। এখানকার শিক্ষিতের হার পূর্বে অনেক কম হলেও এখন ধীরে ধীরে তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউনিয়নের প্রতিটি পরিবারের প্রতিটি শিশুকে বিদ্যালয়মূখী করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে বিশেষ তৎপরতা ও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এই ইউনিয়নের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে পড়াশুনার মান বেশ ভাল। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পরীক্ষার্থী প্রতি বছর পাবলিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে কৃতিত্বের সাক্ষর রাখে। ইউনিয়নটি চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় উচ্চ শিক্ষার জন্য মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করার পর ছাত্র-ছাত্রীরা শহরমূখী হয়ে পড়ে। এই ইউনিয়নবাসী নিজেদের কৃষ্টি ও কালচার ধরে রাখার জন্য অবিরাম কাজ করে চলেছে। ইউনিয়ন পরিষদের নিরলস প্রচেষ্টায় অপসংস্কৃতিক কুপ্রভাব এখনো ইউনিয়নবাসীকে আক্রান্ত করতে পারেনি। নতুন নতুন শিল্প কারখান গড়ে তুলে এ এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করে এ জনপদকে সমৃদ্ধ করা এখন গণদাবীতে পরিণত হয়েছে।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস